পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১২

নগ্ন পদধ্বনি

মধ্যরাত্রি।
        চারিদিক নিস্তব্ধ, নিঝুম।
রাস্তার মোড়ে একটি কুকুর
ডাকছিল থেকে থেকে অনবরত।
ঘরে শঙ্কিত সকলেই, নেই ঘুম
কারো চোখে।
এক অফুরন্ত প্রশ্নসূচক জিজ্ঞাসু
দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন বাবা,
পায়চারি করতে থাকেন আর।
      -হঠাৎ দরজায়,
কড়া নেগে উঠে, বেশ জোরে।
      শঙ্কিত দৃষ্টি আরও
দৃঢ় হতে থাকে সকলের। ওদিকে
দরজায় কড়া নড়ছে, জোরে আরও জোরে।
কেউ কিছু বলার আগেই পা টিপে টিপে
এগিয়ে গেলেন বাবা। খুলে দিলেন
এক মহারূদ্ধ অশুভ দ্বার; আর
সঙ্গে সঙ্গেই রাইফেল হাতে
       প্রবেশ করল তিন জন,
না না, চারজন লোক।
       বাবাকে ওরা নিয়ে গিয়েছিল ধরে।
       বলেছিল, "যাব তো ফিরিয়ে
দিয়ে আবার"।
বাবা আর ফিরে আসেনি ঘরে, আমাদের মাঝে।
সেদিন আমি শুনেছিলাম
       নগ্ন পদধ্বনি।
ওদের আমি পারিনি চিনতে ঠিক,
তবে ওই পদধ্বনি আমি শুনেছি বহুবার।
অবশেষে,
রুধির পরোধি তীরে দাঁড়িয়ে
দেখেছিল নতুন সূযোর্দয়, স্বাধীনতার,
সাত কোটি বাঙ্গালী।

আজ দুই যুগ হয়েছে অতীত,
তথাপি আমি শুনতে পাই
      সেই পরিচিত
      নগ্ন পদধ্বনি।
রাস্তার মোড়ে কুকুর ডেকে উঠে
সেদিনের মত আবার। অদূরে
গোরস্তানে মৃতক ব্যবচ্ছেদ করছে শেয়াল।
      এ কোন অশুভ সংকেত?
আবার কেন ঘরের পাশে
      শুনি পদধ্বনি? হ্যাঁ রাশি রাশি;
তাদের পায়ে বুট নেই, কেবল
সেই পরিচিত
      নগ্ন পদধ্বনি।

রক্ত-স্রোতে বইছে শিহরণ
     শিরায় উপশিরায়।
হস্ত-পেশী প্রকম্পিত।
আমি কি ভয় পাচ্ছি?
     না না, অসম্ভব;
বিদগ্ধ হৃদয় নিয়ে আমি বেঁচে আছি
আজও - এই সবুজ চত্বরে
বাবার হাসিমাখা মুখচ্ছবি দেখব বলে।
শহীদের হাসি দেখব বলে
     আজও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি।
কিন্তু আজ কেন এ লগনে
শুনছি নগ্ন পদধ্বনি?

হে বাংলার প্রহসনের স্বাধীনতা!
      আর কতকাল থাকবে ওরা?
আর কতকাল শুনতে হবে
      শহীদের বুকে
      নগ্ন পদধ্বনি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন