পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০০৯

দ্বৈত নগ

নগ যুগল!
কী নিটোল অবয়বে গড়া তুমি।
ফুলের পাপড়ি, সাগরের ফেনা,
তার চেয়েও বেশি কোমল তোমার
গা। বৃক্ষহীন, তৃণহীন তুমি।
তুমি সবুজ নও;
তবুও সবুজের চাইতে বেশি কিছু।
কেবল তোমার দিকে চেয়েই
কাটিয়ে দেয়া যাবে এ জনম।
হে নগযুগল!
তুমি আমার কাছে এসোনা।
আমি পবিত্র থাকতে চাই।

হরণ

আমার একটা স্বাধীনতা ছিল-
উড়ে যেতাম মুক্ত বিহঙ্গের মতো
দিগন্তের ওপারে;
তোমরা কেড়ে নিয়েছ।

আমার একটা মন ছিল-
রঙীন নকশীকাঁথার জাল বুনে
গা বিছিয়ে দিতাম তার উপর;
তোমরা ভেঙে দিয়েছ।

আমার দু'টো হাত ছিল-
তুলির আঁচড়ে নানা রঙের প্রজাপতি
শোভা পেত ক্যানভাসে;
তোমরা কেটে দিয়েছ।

আমার দু'টো পা ছিল-
চলতে চলতে হারিয়ে যেতাম
সবুজের মেলায়;
তোমরা বেঁধে দিয়েছ।

আমার ক'ফোঁটা অশ্রু ছিল-
যখন তখন জলের ধারা
বয়ে যেত কপোলে:
তোমরা শুকিয়ে ফেলেছ।

সবই তোমরা নিয়েছ কেড়ে,
যা ছিল আমার।
আজ এ রিক্ত-শ্রান্ত ক্ষণে
কিছুই চাইনা ফেরত-
আমি শুধু তোমাদের কাছে
কান্নার লাইসেন্স চাই।
দেবে কি তোমরা?

শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০০৯

তোমাকে বলছি

বড্ড সন্তর্পনে এলে তুমি।
দুষ্টুমীভরা তোমার ছোট ছোট কথায়
মুগ্ধ এ মন;
কখন যে ভালবেসে ফেলেছি
বুঝতে পারিনি এতটুকু।
যখন বুঝলাম, তখন
দেরী হয়েছে ঢের।
"ভালবাস কী আমায়?"-
এ প্রশ্নটা করার সময় হয়ে উঠেনি।

তারপর;
তারপর এক সমুদ্র জিজ্ঞাসা আর দ্বিধা
নিয়ে চলে এলাম অনেক দূরে।
এখানকার একাকী দিনগুলোতে
আমার সাথী কেবল তোমার স্মৃতি।
প্রতিটি নিঃশ্বাসে, নিশার স্বপনে,
আমার অস্তিত্বে মিশে আছ তুমি।
প্রতি মূহুর্তে মনে পড়ে তোমায়-
কেমন আছ তুমি?

সেই অনুভূতি

বললেনা, কিছু বললেনা তুমি আমায়।
এক বুক ব্যথা আর দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে ফিরে এলাম রিক্ত হস্তে।
সন্ত্রস্ত হরিন শাবকের মতো-
ছলছল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম
তোমার পানে।
তবুও বললেনা, কিছুই বললেনা তুমি আমায়।
তোমার চোখে দেখতে চেয়েছি নিজেকে।
আর বলতে চেয়েছি, শুধুই
বলতে চেয়েছি........,
থাক আর কাজ কি?

সহচর

তোমার মুখপানে চেয়ে
বেঁচে থাকবো শতবর্ষ প্রায়।
অদম্য ঝঞ্জাবাত সয়ে যাব নিচলে।
দেবো গহীন জঙ্গল পাড়ি,
একাকী পথ- নিঃসঙ্গ।
শ্বাপদ-সংকুল পথ, পিশাচ চরাচর
ঘুরিছে চারিধারে মোর-
আমি পথ হেটে যাব একা।

লাশ

সামনে পড়ে আছে
একটা লাশ।
শেয়ালের আক্রমনে ক্ষত-বিক্ষত
একটা লাশ।
কাঁদায় লেপ্টা-লেপ্টি হয়ে
সামনে পড়ে আছে
একটা লাশ।
বিবস্ত্র, উৎকট গন্ধে
সামনে পড়ে আছে
একটা লাশ।
নামহীন, পরিচয়হীন,
ধর্মহীন, বর্ণহীন
একটা লাশ।

লাশটি পড়ে আছে রাস্তার ধারে।
পাশের রাস্তায় মানুষের ভীড়।
বালক, শিশু, বৃদ্ধ সবাই
এসেছে লাশ দেখতে।
ধ্রুব ঠিকানা মাটির উপর
পড়ে থাকা একটা লাশ।
ভদ্র লোকেদের কারও কারও নাসিকা
দামী রুমালে ঢাকা।
তাদের চোখে মমতা নেই, শোক নেই-
তাদের দৃষ্টিতে বিস্ময় আর
কৌতুহল।
সার্কাসের ভালুক দেখে ছোট
শিশুরা যেই বিস্ময় আর
কৌতুহলে তাকায়-
সেই একই চোখে তাকানো
এই মানুষেরা।
প্রাণহীন এ দেহ-
একটা লাশ,
এক্ষনে অবহেলা ও উপভোগের
বস্তু।

বেদী

চোখ মেলেই দেখি এক ছোপ রক্ত,
কচি সবুজ ঘাসের উপর-
এখনো শুকায়নি। শিশিরের ছোঁয়া
সে পেয়েছে, সারা রাত্তির ধরে।
ঊষার কিরণচ্ছটা এসে পড়ে
তার উপর; নরম রোদ হাত বুলায়
সযত্নে।
ক্রমশ বিরক্ত আর উগ্র হয় দিবাকর।
অগ্নি-বৃষ্টি ঝরতে থাকে যেন তার
উপর। কচি ঘাস শুকিয়ে বিবর্ণ
আর শক্ত হয়ে যায়- কিন্তু সে
রক্ত শুকায়না।
দিন শেষে সন্ধা এসে
পড়ে চুপি চুপি। সাথে রূপালী চাঁদ
আর হাজারো তারা এসে ভীড় করে।
অপূর্ণ চাঁদ অমাবস্যার বাধ মানে না।
শশীর কোমল আলোতে
ঝিকমিক করে উঠে সে রক্ত। সহস্র
কোটি নক্ষত্র তাই দেখে আনন্দে
নেচে ওঠে। ছোটাছোটি করতে থাকে
দিগ্বিদিক।
কালপুরুষ ডুবে যায়;
শুধু থাকে শুকতারা, আর চাঁদ
থাকে সাথে। সব নিস্তব্ধ হয়ে
পড়ে। এই একাকিত্বেও সজীবতা
হয়না বিলীন।
এমনি কত দিন যায়, মাস
যায়, গত হয় বছর- রক্ত শুকায়না;
যেমনি ছিল, ঠিক তেমনটিই থাকে।

এই করে কত কাল গত হয়,
রক্ত শুকায়না, আড়াল হয়না
এই ধরণীর বুক থেকে। কিন্তু
কেবল আড়াল হয় বিস্মৃতির
দেয়ালে।
এ রক্ত কারও চোখে পড়েনা
কোনদিন; কেউ জানতে পারেনা
এ আমার ধর্ষিতা বোনের ধমনী ছেঁড়া
টকটকে লাল রক্ত- যে বেনারসী
পড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল
বরের জন্য। সে কি জানতো
পিশাচের ছোবল কত ভয়ঙ্কর হয়?

এখানে কোনদিন গড়ে উঠবেনা
মর্মর স্তম্ভ, এখানে কোনদিন মুখরিত
হবেনা হাজারো মানুষের পদচারণায়,
এখানটায় ভুলেও কেউ কোনদিন ফেলবেনা
একটা রক্তপলাশ।
কিন্তু এই বিস্তৃত
সবুজের বুকে একছোপ টকটকে লাল রক্তই
তো আমার জাতির পরিচয়-
মর্মর বেদী নাইবা গড়লে
তোমরা, হৃদয় বেদী গড়ে নিয়েছি
আমি।

বৃহস্পতিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০০৯

দেখতে চাইনা

দেখতে চাইনা তোমায়,
আমি দেখতে চাইনা।
সেই নাদেখা তোমায় নিয়ে
মমতা আর ভালবাসার তুলি দিয়ে
হৃদয়ের গহীন ক্যানভাসে এঁকেছি
জলছবি তোমার।
তোমাকে দেখলে
হয়তোবা মুছে যেতে পারে
তুলির আঁচর। তাই,
দেখতে চাইনা তোমায়,
আমি দেখতে চাইনা।

এসোনা তুমি

একটা হৃদয় আছে;
অবিশ্রাম দুঃখ-তরঙ্গাভিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত
একটা হৃদয়।
শোক তরঙ্গাঘাতে দুমরে মুচড়ে অসহায়ের
মতো সাগর তীরের বালিরাশির
উপর গড়াগড়ি যায়।
দুর্বহ দুঃখাভারে পুরনো ডাস্টবিনে
পতিত হয়, আবর্জনা স্তুপের
নিচে, আরও নিচে স্হান পায় সে।
মাথা তুলে, দিঠি মেলে কখনো
দেখার সুযোগ হয়না পূর্ণিমার
রূপালী শশধর।
কেবল গায়ে মাখা
দুর্গন্ধ বহন করতে হয়, অনাগত
ভবিষ্যতের অনিশ্চিৎ মুহুর্ত পর্যন্ত।

দুঃখ, শোক, হতাশা
সবাই আজ বাসা বেধেছে এই ছোট্র
হৃদয়গহিনে।
কিন্তু কখন হবে শেষ
এই দুঃসহ জ্বালা?

তুমিহীন হৃদয়ের আহাজারিতে
যখন কঠিন গ্রানাইট ভেঙ্গে
চৌচির হয়, তপ্ত মরুর বালিখালে
যখন রক্তস্রোত বইতে থাকে,
তখনও কি হবেনা শেষ এই কষ্টের
পালা?

তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে
যখন শত পূর্ণিমা গত হয়,
অবশেষে লজ্জিত চন্দ্র যখন অমাবস্যায়
গা ঢাকা দেয়, তখনও কি
হবেনা শেষ এই কষ্টের পালা?

তোমার আসার পথ পানে চেয়ে
থেকে থেকে যখন
চোখ অবসর গ্রহন করে,
দিগন্ত ঝাপসা হয়ে আসে,
অবশেষে কোন কিছুই
চোখের পর্দায় ধরা পড়ে না-
তখনও কি হবেনা শেষ
এই কষ্টের পালা?

চোখের অশ্রুতে বুক ভেসে যায়;
অবশেষে প্রশান্ত মহাসাগরের
চেয়ে বড়, আরও বড় আর গভীর
মহাসমুদ্রে পরিনত হয়-
তখনও কি হবে না শেষ এই
কষ্টের পালা?

হৃদয়ে তোমার ছবি আঁকতে আঁকতে
কলমের ডগা ফেটে যখন
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে,
সবকিছু রক্তে রক্তে একাকার
হয়ে যায়-
তখনও কি
হবেনা শেষ এই কষ্টের পালা?

দুর্মর কষ্টাঘাতে হৃদয়ের
বুকফাটা কান্নায় যখন
ফুজিয়ামা, ভিসুভিয়াস ফেটে
তপ্ত অগ্নিদগিরণ করতে থাকে-
তখনও কি হবেনা
শেষ এই
কষ্টের দুঃসহ পালা?

হে! আমার মানসলোকের
রাজকন্যা, তুমি কখনো
এসোনা।
এভাবেই থেকো চিরদিন,
তোমাকে রেখেছি যেভাবে,
এঁকেছি যেভাবে
আমার অন্তর্লোকে।

নির্বোধ

হে নির্বোধগন!
কতিপয় কৃষ্ঞ বর্ণ লাগি
ঝরালে শোণিত তব
রাজপথের 'পরে-
কিসের তরে?

হে নির্বোধগণ!
নেতার বজ্রকণ্ঠস্বর করে শ্রবন
জেগে উঠলে উন্মত্তের ন্যায়,
কাটালে বিনিদ্র রাত্তির শত,
ঝড়-ঝঞ্জা পেছনে ফেলি।
প্রাণের মায়া ত্যাগ করে
রইলে দাঁড়ায়ে অস্ত্রের সুমুখে।

হে নির্বোধগণ!
মৃত্যুকে অবলীলায় হাসিমুখে
করলে বরণ,
হারালে ভগ্নি, ভ্রাতা,
প্রাণের স্বজন।
বুকের রক্তে করলে সিক্ত
সবুজ তৃণ-লতা,
নিয়েছ বিদায় হয়েছ রিক্ত।

হে নির্বোধগণ!
একবার, শুধু একবার
এসে দেখে যাও-
এ জাতির কাছে তোমরা
কেবল সার্কাসের সং
ছাড়া আর কিছু নও।

পেন্ডুলাম

ক্ষণিকের অনিশ্চিৎ মুহুর্তগুলো পার
হয়ে যায়। আর স্পর্শের
বাইরে চলে যায় ক্রমশ।
নাগাল পাওয়া যায়না এখন
হাত বাড়ালেই আর।

ঘড়ির কাটা টিক-টিক করে
ছুটে চলে; কিন্তু শব্দ হয়না।
দেয়ালে টাঙানো বিরাটকায়
দেয়াল ঘড়ির ঘন্টা বেজে উঠে
ঢং ঢং করে, অসময়ে।
সেকেন্ডের কাটা
দ্রুত, আরও দ্রুত চলতে থাকে;
কিন্তু মিনিটের কাটা অগ্রসর
হয়না এক মাইক্রনও।

পরিপূর্ণ অনিশ্চয়তার মাঝে
দোল খেতে থাকে মূহুর্তগুলো।
এপাশ-ওপাশ করতে
থাকে অনবরত।
দু'পাশের দৃঢ় বাহুকে
অবলম্বন করে একই দিকে অগ্রসর
হওয়া সম্ভব হয় না আর।
কেবল দুলতে থাকে,
আর দুলতেই থাকে।
-যেন জীবনটা
পরিপূর্ণ পেন্ডুলাম এক।

যেভাবেই হোক, যেখানেই হোক

পলকে পলকে ভাবিছি তোমায়,
স্বপনেতে হয় দেখা।
বলতে হবে কথাগুলো তোমায়
কাছে-দুরে এথা-সেথা।

কষ্ট

হৃদয় চিরে যার নাম লিখি,
সে বড় সযতনে ছুরি চালায় এ বুকে।

পকেট

জগতের যাবতীয় আনন্দ-হাসি
গর্ভে করে ধারণ, প্রসব করছ
যত্রতত্র; এমনি লীলা তব।
শুন্য, অসার যখন
নিঃশেষিত কাগুজে প্রাণ।

ইন্টারভিউ

"- ... আপনার জীবনের সবচে'
স্মরনীয় ঘটনা বলবেন কী
আমাদের?"
"এই মুহুর্ত পর্যন্ত আমার
হৃদযন্ত্র সচল।"

একটি জবাব খুঁজতে

"পথিক তোমার নাম কি বলো,
নিবাস তোমার কোথা?"
"নাম-ঠিকানা জানিনে আমি;
ছিলেম কোথা, এলেম কোথা,
তাই জানিতে ঘুরিছি এথা।"

ইমারত

ইমারত পড়ে ধূলায় লুটি
একক ভিত্তি যার।
খরা-প্লাবনে তামাশা দ্যাখে
অধিক ভিত্তি যার।

উপহাস

চাঁদ তুমি কি দেখিছ
দূর আকাশে বসি?
কাঁথা-কাপড় নেই যে ভাই-
শীত আমার মাসী।

আলপিন

আলপিন, সূচাগ্র আলপিন!
ক্ষুদ্র অতি শীর তব,
কী অসহ্য যন্ত্রণা-
মলিন চুম্বন
স্পর্শে ত্বক ক্ষণিক যবে।

কতিপয় শব্দমালা তোমার তরে

তোমার জীবনে সর্বদা সুখ
করে যেন বাস-
এই আমার আশ;
এবং দুঃখ যেন স্পর্শেনা তোমার মুখ।

সময় চলে যায়

উপল পড়িলে জলে, উঠে কি তীরে?
কাল যদি হয় গত, আসিবেনা ফিরে।

মন্ত্র

আমার হৃদয়ে বয়ে চলেছে আমাজান।
দু'কূল ছাপিয়া নূহের প্লাবন
গ্রাসিছে জনপদ।
বাতাসে টাইফুনের দোলা
বাজায় পাগলা-ঘন্টি।
উন্মত্ত ভৈরব কল্লোল আছড়ে পড়ে তীরে।
সু-উচ্চ ঢেউয়ের 'ঘাতে টাইটানিকের
অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

নিঃশ্বাসে অগ্নি হল্কা মোর
করতে পারে দাবানল প্রজ্জ্বলন।
হৃৎপিন্ডে হাতুরির আঘাতে
মস্কোর ঘন্টা অথবা যুদ্ধের দামামার
চাইতেও বেশি গর্জন ওঠে।

বলতে পারো, কেন এ মহাপ্রলয়
আজ হৃদয় গহীনে আমার?
একটি কথা, শুধু একটি কথা
বলতে চাই আমি তোমায়-
শুনবে কী?

শুরু

ভেঙ্গে যাক দ্বিধার দেয়াল
মুছে যাক কুয়াশার জাল,
খুলে যাক মুক্ত আলোর জানালা
শুরু হোক নতুন পথ চলা।

একটি স্বপ্নের তৈলচিত্র

হৃদয়ের শত বেদনা মম হৃদয়ে করিছে বাস,
যতই গড়িছে কাল ততই করিছে আমায় গ্রাস।
মনের কষ্ট কহিবারে আজি নাই কেহ মোর পাশে,
আসিবে একদা সেই রমনী দিন গুনি এই আশে।

স্বপ্ন

সবুজ ওড়না বাতাসে উড়ছে,
মৃদু গন্ধ হাওয়ায় ভাসে- পাখিরা নীরব।
রোদের ছোঁয়ায় জল ঝিকিমিকি।
সফেদ মেঘেরা নীল আকাশে।

কেগো তুমি ঐ তৃণ 'পরে-
বন্ধ করে আঁখি ভাবিছ কী মনে?
আসমানী বস্ত্রে আবৃত তনু-
মৃদু হাওয়ায় উড়ছে কেশ ললাটে।

আলতা পরা পায়ে নূপুর নীরব;
ঘাসফুল বুকে নিয়ে-
বন্ধ করে আঁখি ভাবিছ কী মনে?
উদোম দুটো হাত মাথার পেছনে।
কৌতুহল ভরা দৃষ্টিতে শালিক তাকিয়ে তোমার পানে-
উষ্ঞ নিঃশ্বাসে ভাবিছ কী মনে?
রাজহংস নেমেছে জলে, মাছরাঙা চঞ্চল,
ঢেউ উঠে জলকণায়-
বন্ধ করে আঁখি ভাবিছ কী মনে?
কেগো তুমি ঐ তৃণ 'পরে?

ক্যাকটাস

আমি ক্যাকটাস।
আমি সুন্দর নই, নই কোন রূপবতী
ললনার প্রতিকৃতি।
তথাপি তোমরা বড় সযতনে
সাজিয়ে রাখ তোমাদের ড্রইং রুমে।
কন্টকিত সর্বাঙ্গ আমার,
আমি নির্মম, আর
বড্ড অসুন্দর আমি।
তার পরও এই অসুন্দরেই তোমরা
সুন্দরের সন্ধান করো-
তোমাদের চরণে সহস্র প্রণাম
হে! মানব।

হৃদয়হীনা

হৃদয়হীনা তুমি।
কী সুখে হেরিছ এ লীলা
অপলকে আড়ালে বসি;
হে সুন্দরী?
প্রহরের ঘন্টাধ্বনী
শেলসম বিধিছে বুকে,
নয়ন ভরিছে জলে, দ্রুত নিঃশ্বাস-
চাওনি জানিতে হৃদয়হীনা তুমি-
ওগো সুন্দরী।

পরিচয়

জিজ্ঞাসিল, "কে তুমি?
পরিচয় কি তোমার-
হিন্দু, মুসলিম কিবা অন্যকিছু?"
বলিলাম, "আমি পরিচয়হীন এক।
আমি কেউ নই;
আমি মানবসন্তান।"

ছেড়া মানচিত্র-১

শার্টটি রক্তাক্ত,
কয়েকটি বোতাম ছেড়া,
বুকের ডানদিকটায় একটা, দু'টা ফুঁটো,
কয়েকটি ধারা - রক্তের ধারা;
পড়ে আছে এলোমেলো।
বাঁ হাতের আস্তিন তোলা,
ডান হাতের কতকটা কুকুর অথবা
শেয়ালের কামড়ে ছেড়া।
ভেতরে খানিকটা মাংসের টুকরা-
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
শার্টটির রং নীল ছিল,
রক্তে রেঙে লাল না হয়ে কালো
হয়ে গেছে।
পুরো শার্টটি রক্তে একাকার
হয়ে গেছে; এখন আর
চেনার উপায় নেই কার ছিল
এই শার্ট!
শুকিয়ে শক্ত কাগজের মতো
হয়ে গেছে শার্টটি-
ইচ্ছে হলেই ছিড়ে ফেলা যায়
এখন।

চারপাশটা নোংরা;
কিছু পুরনো পলিথিন ব্যাগ-
পঁচেনি, ধুলো মাখা, পড়ে আছে।
তিনটা পুরনো স্যান্ডেল-
ফিতা নেই।
তরকারির আবর্জনায় ভর্তি ছিল
জায়গাটি- দুর্গন্ধ আসছিল
থেকে থেকে।

শার্টের পাশেই একটা পোস্টার-
লেখাগুলো মুছে গেছে রক্তে।
একটা চশমার ডাঁটি,
ভাঙা কাঁচের টুকরা।

শার্টের পকেটে কিছু কাগজের
টুকরা ছিল।
রক্ত শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে
টুকরাগুলোও।
একটা নয়, দু'টা নয়, অনকেগুলো
ছোট টুকরা।
বহু কষ্টে জোড়া দিলাম
টুকরাগুলো।
-একটা মানচিত্র;
এই বাংলাদেশেরই মানচিত্র!
হঠাৎ আচমকা বাতাসে
উড়ে যায় টুকরাগুলো।
জোড়া লাগেনা আর কখনো,
কোনদিন।
এক অনিশ্চিৎ, অনাগত
কালকে সামনে রেখে টুকরাগুলো
উড়ে বেড়ায় বাতাসে-
ভাবহীনভাবে।

টুকরাগুলো জোড়া লাগানোর
চেষ্টা করি আবার- একবার দুবার নয়,
হাজার বার, বার বার।
তবুও জোড়া লাগেনা এই
নিষ্প্রান টুকরাগুলো।

শঙ্কিত চিত্তে এক অজানা
শীতল জোয়ার বয়ে যায়।
অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে উঠি-
আর কখনোকি লাগবেনা জোড়া,
এই ছেড়া মানচিত্র!